নাইক্ষ্যংছড়িতে অবৈধ করাতকলের দাপট; রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, দায়হীন প্রশাসন!

কফিল উদ্দিন, নাইক্ষ্যংছড়ি
 ছবি:
ছবি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পরিবেশ আইন ও বন বিভাগের ছাড়পত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ করাতকল। নামসর্বস্ব কিছু লাইসেন্সধারী মিল থাকলেও বেশিরভাগই চলছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। এসব করাতকল বাগানের গাছ গিলে খেয়ে ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য! রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তার চোখের সামনে দিয়েই এসব ঘটে যাচ্ছে!। 

 নাইক্ষ্যংছড়ির রেজু বিট এলাকায় বর্তমানে ৮টি করাতকল সক্রিয়ভাবে চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২টি করাতকল বৈধ লাইসেন্সধারী, বাকী ৬টি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজু বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন," রেজু বিটের আওতায় ৮টি করাতকল আছে,যার মধ্যে ২টি বৈধ ও ৬টি অবৈধ। অবৈধ করাতকলগুোলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল গত জানুয়ারি মাস"।
তবে মামলা হলেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ, বারবার অবৈধ মিলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো দৃশ্যমান অভিযান বা জবাবদিহিতা। এতে করে দিনের পর দিন গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে কাঠ, ধ্বংস হচ্ছে সবুজ বন, হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য।
বন ধ্বংসের খেসারত দিচ্ছে প্রকৃতি
অবৈধভাবে কাঠ ব্যবসা ও করাতকল চলনোর কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে বনভূমি। এতে শুধু পরিবেশই নয়, সংকটে পড়ছে বননির্ভর প্রাণিকুল এবং জীববৈচিত্র্য। নদী-খাল শুকিয়ে যাচ্ছে, ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষতিও অগণিত।
রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
শুধু বন ধ্বংসই নয়, করাতকল মালিকরা সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। লাইসেন্সবিহীন মিলগুলো কাঠ প্রক্রিয়াজাত করেও কোনো কর পরিশোধ করছে না। ফলে সরকারি কোষাগার বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে।

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন
স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসনের তরফে কোনো বড় ধরনের অভিযান দেখা যায়নি। মামলার পরও অবৈধ করাতকলগুলো চালু থাকায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের আন্তরিকতা ও কার্যকারিতা নিয়েও।

একজন পরিবেশকর্মী বলেন, "যেখানে মামলা হওয়ার পরও করাতকল চালু থাকে,সেখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- এই অবৈধতা চালু রাখতে কারা সহায়তা করছে?

বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, শুধু মামলা করেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। অবৈধ করাতকল বন্ধে প্রশাসনকে হতে হবে আরও সক্রিয়, গঠন করতে হবে মনিটরিং টিম, চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান। একই সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

বিষয়:

এলাকার খবর

সম্পর্কিত